1. সজিনার গুনাগুন সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে চাই

উত্তর সমূহ

  1. সৈয়দা সিফাত জাহান, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য), লালমনিরহাট

    সজিনার পুষ্টি :  বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত করে বলেন এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায়  বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি ‘মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ’ এর   পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য শক্তি কি. ক্যাল ৪৩, পানি ৮৫.২ গ্রাম, আমিষ ২.৯ (গ্রাম), চর্বি  ০.২ (গ্রাম), শর্করা ৫.১ (গ্রাম), খাদ্য আঁশ ৪.৮ (গ্রাম), ক্যালসিয়াম ২৪ (মি. গ্রাম), আয়রন ০.২ (মি. গ্রাম), জিংক ০.১৬ (মি. গ্রাম), ভিটা-এ ২৬ (মি. গ্রাম), ভিটা-বি১ ০.০৪ (মি. গ্রাম), ভিটা-বি২ (মি. গ্রাম) ০.০৪ ভিটামিন-সি  ৬৯.৯ (মি. গ্রাম)। সূত্র বারটান/২০১৬   সজিনা পাতার গুণাগুণ : বিজ্ঞানীরা মনে করেন সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আঁধার। নিরামিষভোগীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনোসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।   এক টেবিল চামচ শুকনা সজিনা পাতার গুঁড়া থেকে ১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ  ও ভিটামিন-এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবর্তী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।   সজিনার তেল : সজিনার শুকানো বীজ ভাঙিয়ে ৩৮-৪০% ভোজ্যতেল পাওয়া যায় যাতে উচ্চ মাত্রার বিহ্যানিক এসিড থাকে যা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। এ তেলের কোনো গন্ধ নাই এবং অন্য যে কোনো ভোজ্যতেলের মতোই মান সম্পন্ন। তেল নিষ্কাশনের পর প্রাপ্ত খইল সার হিসেবে এবং পানি শোধনের কাজেও ব্যবহার হয়।   সজিনার ঔষধি গুণাগুণ : ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কচি পড সবজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধিগুণ আছে।   ০১. শরীর ব্যথা : শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড়ের প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়। ০২. কান ব্যথা : সজিনার শিকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়। ০৩. মাথা ব্যথা : সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। ০৪. ফোঁড়া সারায় : সজিনার আঠার প্রলেপ দিলে ফোঁড়া সেরে যায়। ০৫. মূত্রপাথরি ও হাঁপানি : সজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরি দূর হয়। ফুলের রস হাঁপানি রোগের বিশেষ উপকারী। ০৬. গ্যাস থেকে রক্ষা : সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেট জমা গ্যাস দূর হয়। ০৭. কুকুরের কামড়ে : সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়। ০৮. জ্বর ও সর্দি : পাতার শাক খেলে যন্ত্রণাধায়ক জ্বর ও সর্দি দূর হয়। ০৯. বহুমূত্র রোগ : সজিনা পাতার রসে বহুমূত্র রোগ সারে। ১০. কোষ্ঠকাঠিন্য ও দৃষ্টিশক্তি : সজিনার ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। ১১. সজিনা ফুল দুধের সাথে রান্না করে নিয়মিত খেলে কামশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। এর চাটনি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। ১২. গেঁটে বাত : সজিনার ফল নিয়মিত রান্না করে খেলে গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ১৩. ক্রিমিনাশক ও টিটেনাস : সজিনার কচি ফল ক্রিমিনাশক, লিভার ও প্লীহাদোষ নিবারক, প্যারালাইসিস ও টিটেনাস রোগে হিতকর। ১৪. অবশতা, সায়াটিকা : সজিনার বীজের তেল মালিশ করলে বিভিন্ন বাত বেদনা, অবসতা, সায়াটিকা, বোধহীনতা ও চর্মরোগ দূর হয়। ১৫. পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। ১৬.  পোকার কামড়ে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে সজিনার রস ব্যবহার করা হয়। ১৭. ক্ষতস্থান সারার জন্য সজিনা পাতার পেস্ট উপকারী। ১৮. সজিনা শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারি ধাতু অপসারণ এবং শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে। ১৯. ইন্টেস্টাইন ও প্রোস্টেট সংক্রমণ : সজিনা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। ২০. শ্বাসকষ্ঠ, মাথা ধরা, মাইগ্রেন, আর্থাইটিস এবং চুলপড়া রোগের চিকিৎসায় ও সজিনা কার্যকর ভূমিকা রাখে।