ড্রাগন ফল যার উৎপত্তি সেন্ট্রাল অামেরিকায় কিন্তু 
বাণিজ্যিকভাবে এটি সর্বাধিক চাষ হয় ভিয়েতনামে। বলা বাহুল্য, ভিয়েতনামের 
সাথে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ুর বেশ সাদৃশ্যের কারণে দিন দিন বাংলাদেশেও 
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ। 
মাগুরা সদর উপজেলার রাউতরা গ্রামের কৃষক মো. শওকত হোসেন। অাগে
 তিনি স্ট্রবেরীর চাষ করতেন, সেই সুবাদে রাজশাহীতে যান স্ট্রবেরীর চারা 
সংগ্রহ করতে। সেখানে তিনি একজন কৃষকের ড্রাগন ফলের চাষ দেখে অাগ্রহী হন। 
সেই কৃষকের কাছে ড্রাগন চাষের অাদ্যেপান্ত জানেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে 
অভিজ্ঞদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরামর্শ গ্রহণ করে তিনি এ ফল চাষের 
সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর সেখান থেকে কিছু চারা এবং মাগুরা হর্টিকালচার থেকে 
সংগ্রহকৃত মোট ৪০০ চারা দিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন ড্রাগন ফলের চাষ। 
প্রথমাবস্থায় অতিবৃষ্টি এবং তীব্র খরার কারণে গাছে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা 
দেয়, যার কারণে কিছু চারা মারা যায়। তবে, এরপর থেকে নিয়মিত সঠিক 
ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি তার বাগানকে একটি শক্ত অবস্থানে দাড় করান।
ড্রাগন চাষের সাফল্যের গল্প জানতে চাইলে শওকত হোসেন জানান, 
“ড্রাগন অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। এটি চাষে সুবিধা হলো রোগ-বালাই কম হয় এবং 
রাসায়নিক সার অত্যন্ত কম লাগে। এছাড়া, চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল 
পাওয়া যায়।” তিনি এ মৌসুমে (মে-নভেম্বর) প্রায় তিন লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল 
বিক্রি করেছেন। এসময় তার খরচ হয়েছে সর্বসাকুল্যে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা। 
খরচ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু রাসায়নিক সার লাগেনা 
সেহেতু খরচটা অনেকাংশে কমে যায়। ড্রাগন চাষে প্রধানত জৈব সার লাগে। অার 
এক্ষেত্রে তিনি গোবর সার এবং হাস-মুরগীর মলমূত্র, বিষ্ঠা ব্যবহার করে 
থাকেন। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে তিনি ২০ কেজি ফল পেয়ে থাকেন।
শওকত হোসেনের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করতে যশোর, ঝিনাইদহ, 
ফরিদপুর, মাগুরা এমনকি ঢাকা থেকেও ব্যাপারীরা ছুটে অাসেন নিয়মিত। তবে, যশোর
 ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এই ড্রাগনের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সেখানকার বিক্রেতা
 নুর ইসলাম জানান, তিনি ৪০০ টাকা কেজি দরে এখান থেকে ড্রাগন ক্রয় করে নিয়ে 
যান এবং সাধারণত ৬০০ টাকা এবং কোনো কোনো সময়ে ৭০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করে 
থাকেন।
রপ্তানি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় এ ফলটি ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড 
থেকে প্রথম বাংলাদেশে আমদানি করা হলেও এখন পর্যন্ত এর চাষাবাদ ব্যাপক 
সম্প্রসারণ হয়নি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য বাউ ড্রাগন 
ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল) পাওয়া যায়। এ ছাড়াও হলুদ ও কালচে লাল 
জাত রয়েছে। বছরের যেকোনো সময়ে চারা রোপণ করা যায়। তবে চারা রোপণের মাস 
খানেক পূর্বে গর্ত তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক সার দেয়া উত্তম। এটি 
খুব দ্রুত বর্ধনশীল। এক বছরের মধ্যেই ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। 
রোগবালাই পোকা মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের একটি 
গাছে ৫-২০টি এবং পূর্ণবয়স্ক গাছে বছরে ২৫-১০০টি ফল পাওয়া যায়। গাছের 
পূর্ণতা পেতে তিন বছর সময় লাগে। সম্ভাবনাময় এ ফলটির আবাদ বাড়লে কৃষকরা 
লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষক মো. শওকত হোসেন।
                                                 
                                            
উত্তর সমূহ