মাটিঃ এঁটেল, দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে আখ ভাল জন্মে। তবে পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত এঁটেল-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভাল। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি যেখানে পানি জমে থাকেনা এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
জাত
খরা, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততাসহ প্রতিকূল পরিবেশ সহিষ্ণু ইক্ষুজাতসমূহ: ঈশ্বরদী ২০, ঈশ্বরদী ২১, ঈশ্বরদী ২২, ঈশ্বরদী ২৪, ঈশ্বরদী ২৫, ঈশ্বরদী ২৬, ঈশ্বরদী ২৭, ঈশ্বরদী ২৮, ঈশ্বরদী ২৯, ঈশ্বরদী ৩০, ঈশ্বরদী ৩১, ঈশ্বরদী ৩২, ঈশ্বরদী ৩৩, ঈশ্বরদী ৩৪, ঈশ্বরদী ৩৭, ঈশ্বরদী ৩৮, ঈশ্বরদী ৩৯ ও ঈশ্বরদী ৪০।
  • মুড়ি আখ চাষ উপযোগী ইক্ষুজাতসমূহ: ঈশ্বরদী ২/৫৪, এলজেসি, ঈশ্বরদী ২০, ঈশ্বরদী ২১, ঈশ্বরদী ২৭, ঈশ্বরদী ২৮, ঈশ্বরদী ২৯, ঈশ্বরদী ৩০, ঈশ্বরদী ৩১, ঈশ্বরদী ৩২, ঈশ্বরদী ৩৩, ঈশ্বরদী ৩৪, ঈশ্বরদী ৩৭ ও ঈশ্বরদী ৩৮।
  • চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী ইক্ষুজাতসমূহ: সিও ২০৮, সিও ৫২৭, গ্যান্ডারি, অমৃত এবং ঈশ্বরদী ২৪।
রোপণের সময়ঃ জানুয়ারী মাস ছাড়া বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চারা রোপন করা যায়। তবে চারা রোপণের সর্বোত্তম সময় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর। ৩০-৩৫ হাজার কাটিং বা সেট/হেক্টর বীজ প্রয়োজন হয়।
সারের পরিমাণঃ প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ১২০-১৫০ কেজি, টিএসপি ৮০-১১০ কেজি, এমওপি ১১০-১৪০ কেজি, জিপসাম ৫০-৬০ কেজি, জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি, ডলোচুন ১০০-১৫০ কেজি, জৈব সার ২-৩ টন প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া অন্যান্য সব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি রোপণ নালায় দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া ও এমওপি চারা রোপণের পর কুঁশি গজানো পর্যায়ে (১২০-১৫০ দিন) উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি
  • সমতলী পদ্ধতি: নালা তৈরি করে নালায় ৫-৬ ইঞ্চি গভীরে রোপণ করা হয়।
  • ভাওড় পদ্ধতি: সমতলী পদ্ধতির চেয়ে কিছুটা গভীর নালা তৈরি করে ৮-১০ গভীরে রোপণ করা হয়।
  • পরিখা/নালা: এ পদ্ধতিতে খননকৃত নালায় একটি কেন্দ্র থেকে অন্যটির কেন্দ্রের দূরত্ব ১০০-১২০ সেমি.। নালায় গভীরতা ৩০ সেমি. উপরের প্রস্থ ৩০ সেমি এবং নিচের প্রস্থ ২৫ সেমি। নালার নিচের দিকে ৫-৭ গভীরতায় বীজ আখ রোপণ করা হয় এবং উপরের মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
  • রোপা পদ্ধতি: রোপা পদ্ধতিতে এক চোখ বিশিষ্ট আখ খন্ড পলিথিন ব্যাগে কিংবা দুই চোখ বিশিষ্ট আখ খন্ড বীজতলায় রোপণ করে চারা করে সেই চারা মূল জমিতে রোপণ করা হয়।
আন্তঃপরিচর্যাঃ গাছ যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য আখ গাছ বেঁধে দিতে হবে। আখের শুকনা পাতা ঝরে পড়ে না বলে শুকনা পাতা ছিঁড়ে ফেলতে হয়। মাটিতে বাতাস চলাচলের জন্য মাটি আলগা করে দেয়া দরকার এবং ২/৩ বার আগাছা দমন করতে হয়। গাছের বয়স ৭/৮ সপ্তাহ হলে প্রথমবার এবং ১২-১৪ সপ্তাহ হলে কাণ্ডে ২-১টি গিঁট দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার মাটি দিতে হবে। প্রয়োজন হলে বাঁশের সাহায্যে আখ গাছ ঠেস দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে প্রতিটি আড় শুকনা পাতা দিয়ে বেঁধে পাশাপাশি দুই সারির ৩-৪ টি ঝাড় একত্রে বেঁধে দিতে হবে। আখ দীর্ঘজীবি ফসল বিধায় জমিতে প্রয়োজন অনুসারে সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
  • আখের ডগা মাজরা পোকা ও কান্ডের মাজরা পোকা: আখের সারির দুই পাশে নালা কেটে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি পিলার ফুরান/ ফুরাডান ৫জি বা ফুরাটায় ৫জি প্রথমবার মার্চ মাসে ও দ্বিতীয়বার মে মাসে প্রয়োগ করে মাটি ঢেকে দিয়ে সেচ দিতে হবে।
  • উঁইপোকা: উঁইপোকা রোপণকৃত আখখন্ড খেয়ে ফেলে, ফলে চারা গজাতে পারে না। গাছে আক্রমণ করলে গাছ শুকিয়ে যায়। দমনের জন্য মুড়ি আখ চাষ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। উঁইপোকার ডিবি ভেঙ্গে রাণী খুঁজে মেরে ফেলা সহ  পাটকাঠির ফাঁদ দিতে হবে। ভিটাশিল্ড/লিথাল ২০ ইসি প্রয়োগ করা।
  • লাল পচা রোগ: এক ধরণের ছত্রাকজনিত রোগ। আক্রান্ত আখের কান্ডকে লম্বালম্বি চিড়লে ভেতরের কোষগুলো পচে ফ্যাকাসে লাল রঙ দেখায়। এ জন্য রোপণের বীজ শোধন করতে হবে। ফরাস্টিন ৫০ এসপি হেক্টর প্রতি ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করা উচিত।
ফসল সংগ্রহঃ আখ পরিপক্ক হতে সাধারণত: ১২-১৫ মাস সময় লাগে।
ফলনঃ হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৪৫-৭৫ টন।